শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর, ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১
The Daily Post

ফিলিপাইন জাতের আখ আবাদ করে সফলতার শীর্ষে সোহেল 

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

ফিলিপাইন জাতের আখ আবাদ করে সফলতার শীর্ষে সোহেল 

মাত্র চার লাখ টাকা খরচ করে ফিলিপাইন জাতের আখ আবাদ করে বছর না ঘুরতেই ১৫ লাখ টাকার বেশি আয় করার স্বপ্ন দেখছেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার পোড়াদহের কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানা। নিজের চার বিঘা জমিতে ফিলিপাইনের উন্নত জাতের আখের চারা রোপণ করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন তিনি। 

সোহেলের আবাদ দেখে অনেকেই এ আখ চাষে ঝুঁকছেন। ভাগ্যবদলে ক্রিকেটার থেকে তিনি এখন একজন সফল চাষি। পোড়াদহ ইউনিয়নের উত্তর কাটদহ বাবুপাড়া এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে সোহেল রানা। এক সময় ছিলেন ক্রিকেট খেলোয়াড়। পোড়াদহের খেলার মাঠ কাঁপিয়ে পরবর্তীতে খেলেছেন ঢাকার সব নামি-দামি ক্লাবে। 

শারীরিক অসুস্থতার কারণে খেলা ছাড়তে হয় তাকে। এরপর কুষ্টিয়ায় ফিরে এসে ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসার পাশাপাশি কয়েক বছর আগে ছাতিয়ান ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর গ্রামের মাঠে নিজেদের প্রায় তিন একর জমিতে মিশ্র ফলবাগান গড়ে তোলেন। পাশাপাশি এক একর জমিতে উন্নত জাতের গেন্ডারি, কলা ও কাচাভা আবাদ করেন। 

ইতোমধ্যে সোহেল রানা প্রায় পাঁচ লাখ টাকার মেওয়া ফল বিক্রি করেছেন। আর এখন রয়েছে ফিলিপাইন জাতের আখ। ইউটিউবে আখ চাষের নিউজ দেখে সোহেল রানা মেওয়া ফলসহ আখ আবাদে আগ্রহী হন। সেই থেকে নিজের জমিতে রোপণ করেন আখের চারা। এতে সব মিলিয়ে তার খরচ হয়েছে চার লাখ টাকার মতো। মিরপুর কৃষি অফিস সোহেলের জমিতেই একটি ট্রাইকো কম্পোস্ট জৈবসারের ছোট্ট প্লান্ট করে দিয়েছে। সেখানে উৎপাদন হচ্ছে জৈবসার। 

এসব সার জমির ফসলে ব্যবহার করছেন তিনি। ফলে উৎপাদন খরচ কম হচ্ছে তার। এখন প্রতি পিস আখ তিনি বিক্রি করছেন ৩০-৪০ টাকায়। স্থানীয় রস ও আখ ব্যবসায়ীরা জমি থেকে কিনে নিচ্ছেন আখ। তারা আবার এসব আখ ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি করছেন। রমজান মাসে এসব আখ আরও ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে। তার এই মিশ্র ফলবাগানে কাজ করে এলাকার অনেকে জীবিকা নির্বাহ করছেন। 

সোহেল রানা বলেন, আমার এ বাগানের বয়স এখন প্রায় সাড়ে তিন বছর। এ বাগানে অন্যান্য ফলের পাশপাশি ফিলিপাইন জাতের আখ আবাদ করা হয়েছে। আখ বেশ ভালো হয়েছে। দামও বেশ ভালো পাচ্ছি। আশা করি এই আখ বিক্রি করে এক বছরেই আমার আয় হবে ১৫ লাখ টাকা। তবে এবার ভালো দাম পাওয়ায় আগামীতে আখের আবাদ আরও বাড়াবেন বলে জানান তিনি। স্থানীয় কৃষক মুনতাজ আলী বলেন, এ ধরনের আবাদ এলাকায় নেই। সোহেল রানার ফিলিপাইন জাতের এ আখ আবাদ দেখে আমরা উদ্বুদ্ধ হয়েছি। 

আমরাও এমন  আখের আবাদ করার কথা ভাবছি। এই আখ যেমন নরম, তেমনি রসালো। অনেকেই প্রতিদিন তার ক্ষেতে আসেন আখ দেখতে ও খেতে। রসালো আখ খেয়ে খুশি ভোক্তারা। আখ ও রস ব্যবসায়ী লিটন আলী বলেন, আমি পোড়াদহ রেলগেটে আখ ও রসের ব্যবসা করি। সোহেল রানার আবাদকৃত ফিলিপাইন জাতের এ আখ যেমন নরম, তেমনি রসালো। এ আখ নরম ও রস বেশি হওয়ায় লাভ পাওয়া যায় বেশি। মিষ্টি এই আখের রসের চাহিদাও অনেক। 

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা কৃষি অফিসার আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, সোহেল রানা এ এলাকায় একজন শিক্ষিত ও আদর্শ কৃষক। কৃষিতে যত শিক্ষিত তরুণ আসবে, ততই কৃষি উন্নত এবং সমৃদ্ধ হবে। সোহেলের আখ চাষ দেখে অনেক কৃষক এটি আবাদে আগ্রহী হচ্ছেন। আমরাও তাকে সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছি। 

টিএইচ